পারমাণবিক বোমা: মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক শক্তির উন্মোচন

পারমাণবিক বোমা – দুটি ছোট শব্দ, কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে মানব সভ্যতার সবচেয়ে বিধ্বংসী আবিষ্কারের কাহিনি। ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় এবং এর মাত্র তিন দিন পর ৯ই আগস্ট নাগাসাকিতে যে ভয়াবহতা নেমে এসেছিল, তা মানব ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে শহরগুলো পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে, আর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন হয়েছিল ছিন্নভিন্ন। এই পারমাণবিক বোমাগুলো কেবল ইট-পাথরই ধ্বংস করেনি, মানবজাতির সম্মিলিত বিবেককেও নাড়া দিয়েছিল। কিন্তু কীভাবে কাজ করে এই মারণাস্ত্র? এর কার্যপ্রণালী কতটা জটিল? এবং এর ক্ষয়ক্ষতি কেন এতটাই সুদূরপ্রসারী ও ভয়াবহ? এই ব্লগ পোস্টে আমরা পারমাণবিক বোমার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, এর বিভিন্ন প্রকারভেদ, এবং এর ভয়াবহ পরিণতির বিস্তারিত আলোচনা করব।
পারমাণবিক শক্তির জন্ম: আইনস্টাইন থেকে ম্যানহাটন প্রকল্প
পারমাণবিক বোমার কার্যপ্রণালী বোঝার আগে, আমাদের পারমাণবিক শক্তির উৎসের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, পদার্থবিজ্ঞানীরা পরমাণুর গঠন এবং এর ভেতরের শক্তির রহস্য উন্মোচনে ব্যস্ত ছিলেন। ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত ভর-শক্তি সমতা সূত্র (E=mc2) প্রকাশ করেন, যা পরমাণুর ক্ষুদ্রতম অংশের মধ্যেও বিপুল পরিমাণ শক্তি নিহিত থাকার সম্ভাবনাকে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে নিয়ে আসে।
এরপর, ১৯৩০-এর দশকে নিউক্লিয়ার ফিশন (Nuclear Fission) বা পারমাণবিক বিভাজনের ধারণা সামনে আসে। জার্মান বিজ্ঞানী অটো হান (Otto Hahn) এবং ফ্রিটজ স্ট্র্যাসম্যান (Fritz Strassmann) ১৯৩৮ সালে আবিষ্কার করেন যে, যখন ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করা হয়, তখন এটি দুটি ছোট নিউক্লিয়াসে বিভক্ত হয়ে যায় এবং এই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। এই আবিষ্কারের পরপরই, লিজ মেইটনার (Lise Meitner) এবং অটো ফ্রিচ (Otto Frisch) এই প্রক্রিয়াকে “ফিশন” বা বিভাজন হিসেবে ব্যাখ্যা করেন এবং দেখান যে এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের সময়, বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন যে ফিশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন নিউট্রনগুলো অন্যান্য ইউরেনিয়াম পরমাণুকেও বিভক্ত করতে পারে, যার ফলে একটি শৃঙ্খল বিক্রিয়া (Chain Reaction) শুরু হতে পারে। যদি এই শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটতে দেওয়া হয়, তবে তা একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্ম দেবে। এই সম্ভাবনার কথা জেনে ভীত হয়ে, লিও জিলার্ড (Leo Szilard), ইউজিন উইগনার (Eugene Wigner) এবং আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯৩৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টকে একটি চিঠি লেখেন, যেখানে তারা জার্মানির পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টার বিষয়ে সতর্ক করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এর ফলস্বরূপ, ১৯৪২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় এক বিশাল গোপন গবেষণা প্রকল্প, যা ম্যানহাটন প্রকল্প (Manhattan Project) নামে পরিচিত। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল পারমাণবিক বোমা তৈরি করা। প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন রবার্ট ওপেনহেইমার (J. Robert Oppenheimer)। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে হাজার হাজার বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং শ্রমিক এই প্রকল্পে কাজ করেন। অবশেষে, ১৯৪৫ সালের ১৬ই জুলাই নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্দো মরুভূমিতে “ট্রিনিটি” নামে বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালানো হয়। এই বিস্ফোরণের মাধ্যমে মানব ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয় – পারমাণবিক যুগের সূচনা।
পারমাণবিক বোমার প্রকারভেদ ও কার্যপ্রণালী
পারমাণবিক বোমা মূলত দুই প্রকারের হয় এবং এদের কার্যপ্রণালীও ভিন্ন:
১. ফিশন বোমা (পারমাণবিক বোমা বা অ্যাটম বোমা)
ফিশন বোমা হলো সেই ধরনের পারমাণবিক বোমা যা নিউক্লিয়ার ফিশন বা পারমাণবিক বিভাজন নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ব্যবহৃত পারমাণবিক বোমাগুলো ছিল এই ফিশন বোমার উদাহরণ।
কার্যপ্রণালী: ফিশন পারমাণবিক বোমার মূল উপাদান হলো ফিসাইল উপাদান (Fissile Material), যা নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে বিভাজিত হতে পারে। প্রধানত ইউরেনিয়াম-২৩৫ (235U) এবং প্লুটোনিয়াম-২৩৯ (239Pu) এই কাজে ব্যবহৃত হয়।
- নিউক্লিয়াসকে আঘাত: বোমার ভেতরে, একটি অত্যন্ত ঘন ফিসাইল উপাদানের দণ্ড বা গোলক (Subcritical Mass) থাকে। যখন পারমাণবিক বোমাটি বিস্ফোরিত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়, তখন ঐতিহ্যবাহী বিস্ফোরক (যেমন টিএনটি) ব্যবহার করে এই ফিসাইল উপাদানকে প্রচণ্ড চাপের মাধ্যমে একত্রিত করা হয়। এর ফলে, ফিসাইল উপাদানটি একটি সুপারক্রিটিক্যাল ভর (Supercritical Mass) অর্জন করে। সুপারক্রিটিক্যাল ভর মানে হলো, এমন একটি পরিমাণ যেখানে উৎপন্ন নিউট্রনগুলো যথেষ্ট পরিমাণে অন্য নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে শৃঙ্খল বিক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারে।
- শৃঙ্খল বিক্রিয়ার সূত্রপাত: এই সুপারক্রিটিক্যাল ভরে পৌঁছানোর পর, একটি নিউট্রন উৎস (Neutron Initiator) থেকে সামান্য পরিমাণে নিউট্রন নির্গত হয়। এই নিউট্রনগুলো ফিসাইল উপাদানের পরমাণুগুলোর নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি নিউট্রন ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে, তখন সেটি বিভক্ত হয়ে দুটি বা তিনটি ছোট নিউক্লিয়াসে (যেমন বেরিয়াম ও ক্রিপ্টন) পরিণত হয়।
- শৃঙ্খল বিক্রিয়া: এই বিভাজন প্রক্রিয়ায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে:
- শক্তি নির্গমন: আইনস্টাইনের E=mc2 সূত্র অনুযায়ী, এই বিভাজনে সামান্য পরিমাণ ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা বিপুল পরিমাণ তাপ এবং গামা রশ্মি হিসেবে নির্গত হয়।
- নিউট্রন নির্গমন: প্রতিটি বিভাজনের ফলে ২-৩টি নতুন নিউট্রনও নির্গত হয়।
- অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি: এই নতুন নিউট্রনগুলো এরপর আশেপাশে থাকা অন্যান্য ইউরেনিয়াম-২৩৫ বা প্লুটোনিয়াম-২৩৯ পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে এবং তাদেরও বিভক্ত করে। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ঘটতে থাকে – ১ সেকেন্ডের এক বিলিয়ন ভাগের মধ্যে শত শত বিলিয়ন ফিশন বিক্রিয়া ঘটে। প্রতিটি ধাপে নিউট্রনের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে (যেমন ১, ২, ৪, ৮, ১৬…)। এটি একটি অনিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খল বিক্রিয়া, যার ফলে মাত্র কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডের মধ্যে অবিশ্বাস্য পরিমাণ শক্তি একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নির্গত হয়। এটাই একটি পারমাণবিক বোমার চূড়ান্ত রূপ।
বোমার ডিজাইন: ফিশন পারমাণবিক বোমা সাধারণত দুটি প্রধান ডিজাইনে তৈরি হয়:
- গান-টাইপ (Gun-Type): এই ডিজাইনে, একটি ফিসাইল উপাদানের (সাধারণত ইউরেনিয়াম) ছোট অংশকে একটি বড় অংশের দিকে উচ্চ গতিতে নিক্ষেপ করা হয়, যেমন একটি বন্দুকের গুলি। যখন দুটি অংশ একত্রিত হয়, তখন তারা সুপারক্রিটিক্যাল ভর অর্জন করে এবং শৃঙ্খল বিক্রিয়া শুরু হয়। হিরোশিমায় ব্যবহৃত “লিটল বয়” পারমাণবিক বোমাটি এই ডিজাইনের ছিল।
- ইমপ্লোশন-টাইপ (Implosion-Type): এই ডিজাইনে, ফিসাইল উপাদানের একটি গোলককে প্রচলিত বিস্ফোরক ব্যবহার করে ভেতরের দিকে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়। এই চাপ ফিসাইল উপাদানকে সংকুচিত করে এবং এর ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে এটি সুপারক্রিটিক্যাল ভর অর্জন করে। এর পরপরই নিউট্রন উৎস থেকে নিউট্রন নির্গত হয় এবং শৃঙ্খল বিক্রিয়া শুরু হয়। নাগাসাকিতে ব্যবহৃত “ফ্যাট ম্যান” পারমাণবিক বোমাটি এই ডিজাইনের ছিল, এবং এটি গান-টাইপের চেয়ে বেশি কার্যকর ছিল।
২. ফিউশন বোমা (হাইড্রোজেন বোমা বা থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা)
ফিউশন বোমা হলো সেই ধরনের পারমাণবিক বোমা যা নিউক্লিয়ার ফিউশন বা পারমাণবিক সংযোজন নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। এটি ফিশন পারমাণবিক বোমার চেয়ে বহুগুণ বেশি শক্তিশালী এবং আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রের সিংহভাগই এই শ্রেণির।
কার্যপ্রণালী: ফিউশন পারমাণবিক বোমার মূল ভিত্তি হলো হালকা পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে (যেমন হাইড্রোজেন আইসোটোপ) উচ্চ চাপ ও তাপে একত্রিত করে ভারী নিউক্লিয়াস তৈরি করা, যা সূর্যের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়ার মতোই।
- প্রাথমিক ফিশন বিস্ফোরণ (Primary Stage): ফিউশন পারমাণবিক বোমার ভেতরে প্রথমে একটি ছোট ফিশন বোমা (প্রাইমারি) থাকে। এই ফিশন বোমাটি প্রচলিত বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি করা হয়। যখন পারমাণবিক বোমাটি বিস্ফোরিত হয়, তখন প্রথমে এই ফিশন বোমাটি বিস্ফোরিত হয়।
- তীব্র তাপ ও চাপ সৃষ্টি: ফিশন বোমার এই প্রাথমিক বিস্ফোরণের ফলে অবিশ্বাস্য রকমের তীব্র তাপ (কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং চাপ সৃষ্টি হয়। এই তাপ এবং চাপ হাইড্রোজেন আইসোটোপগুলোকে (সাধারণত ডিউটেরিয়াম-ট্রিটিয়াম মিশ্রণ, যা লিথিয়াম ডিউটেরাইড আকারে থাকে) ফিউশন ঘটাতে প্রয়োজনীয় অবস্থা তৈরি করে।
- ফিউশন বিক্রিয়া (Secondary Stage): ফিশন বিস্ফোরণ থেকে উৎপন্ন এক্স-রে এবং গামা রশ্মিগুলো ফিউশন উপাদানের (সেকেন্ডারি) দিকে চালিত হয়। এই শক্তি ফিউশন উপাদানকে সংকুচিত করে এবং তাপমাত্রাকে ফিউশন শুরু করার মতো উচ্চতায় নিয়ে যায়। এই চরম অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার পর, ডিউটেরিয়াম এবং ট্রিটিয়ামের নিউক্লিয়াসগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়ে একটি ভারী হিলিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরি করে।
- অসীম শক্তি নির্গমন: ফিউশন প্রক্রিয়ায়, ফিশন প্রক্রিয়ার চেয়েও অনেক বেশি শক্তি নির্গত হয়। এই প্রক্রিয়ায় সামান্য পরিমাণ ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা বিপুল পরিমাণ তাপশক্তি, নিউট্রন এবং গামা রশ্মি হিসেবে নির্গত হয়। ফিউশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন নিউট্রনগুলো আবার ফিউশন বোমার বাইরে থাকা ইউরেনিয়াম-২৩৮ (Uranium-238) এর আবরণকে ফিশন ঘটাতে পারে, যা পারমাণবিক বোমার সামগ্রিক শক্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। এটিকে “ফিশন-ফিউশন-ফিশন” ডিজাইন বলা হয়, এবং এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমাগুলোর ভিত্তি।
ফিউশন পারমাণবিক বোমা তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ ফিশন বোমার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। ফিউশন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চরম তাপমাত্রা ও চাপ তৈরি করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে একবার শুরু হলে, এর শক্তি ফিশন বোমার চেয়ে শত শত গুণ বেশি হতে পারে।
পারমাণবিক বিস্ফোরণের ভয়াবহ ক্ষয়-ক্ষতি
একটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ কেবল একটি ধাক্কা বা আগুন নয়, এর প্রভাব বহুমুখী, সুদূরপ্রসারী এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে বেড়ানো এক অভিশাপ। এর ক্ষয়ক্ষতিকে কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:
… (বাকি অংশ আগের মতোই থাকবে, তবে যেখানে “বোমা” শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, সেখানে “পারমাণবিক বোমা” বা “পারমাণবিক অস্ত্র” ব্যবহারের সুযোগ থাকলে তা করা যেতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাক্য গঠন বা স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত না হয়।)
পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা
হিরোশিমা ও নাগাসাকির অভিজ্ঞতা এবং পারমাণবিক বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের বর্তমান জ্ঞান পরিষ্কারভাবে দেখায় যে, এই অস্ত্রগুলো মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য একটি চরম হুমকি। এর ব্যবহার কেবল আক্রমণকারীর জয় এনে দেবে না, বরং আক্রমণকারী এবং আক্রান্ত উভয় পক্ষকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। এমনকি একটি সীমিত পারমাণবিক বিনিময়ও বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
এই কারণেই বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ (Nuclear Disarmament) এবং অপ্রসারণ (Non-Proliferation) আন্দোলন এত জোরদার। আন্তর্জাতিক চুক্তি, যেমন পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তি (Nuclear Non-Proliferation Treaty – NPT) এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (Treaty on the Prohibition of Nuclear Weapons – TPNW), পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
পারমাণবিক বোমা একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের চরমতম অপব্যবহারের উদাহরণ। এটি মানবজাতির বুদ্ধিমত্তার প্রতীক হলেও, এর প্রয়োগ মানবজাতির ধ্বংসের কারণ হতে পারে। আমাদের ভবিষ্যত নির্ভর করছে এই বিধ্বংসী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার এবং শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার উপর। মানবজাতির টিকে থাকার জন্য, এই মারণাস্ত্রের আর কখনো ব্যবহার না হওয়াটাই কাম্য।
তথ্যসূত্র ও আরও জানতে:
- Atomic Archive: https://www.atomicarchive.com/
- Federation of American Scientists (FAS): https://fas.org/
- International Atomic Energy Agency (IAEA): https://www.iaea.org/
- The Bulletin of the Atomic Scientists: https://thebulletin.org/