আয়াতুল কুরসী বাংলা উচ্চারন অর্থ ও ফযিলত

Islamic

আয়াতুল কুরসী – ফজিলত, উচ্চারণ, অর্থ ও বৈজ্ঞানিক বিস্ময়

আয়াতুল কুরসী ছবি

আয়াতুল কুরসী হলো পবিত্র কুরআনের সূরা আল-বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, যা ইসলামী শিক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন একটি আয়াত হিসেবে বিবেচিত। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ, মহত্ব, ক্ষমতা ও জ্ঞানের বিশালতা অত্যন্ত গভীরভাবে বর্ণিত হয়েছে।

আয়াতুল কুরসী: আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ

🔹 আরবি:

اللّهُ لاَ إِلَـٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ ۖ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

🔹 বাংলা উচ্চারণ:

আল্লা হু লা ইলা হা ইল্লা হু ওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, লা তাখুযুহু সীনাতুওঁ ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইন্দাহু ইল্লা বি ইযনিহ। ইয়া’লামু মা বাইন আঈদীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিছাই-ইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা’আ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুমা; ওয়া হুয়াল আলিইইয়ুল আযীম।

🔹 বাংলা অর্থ:

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে এবং পেছনে যা কিছু রয়েছে তা সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কিছুই আয়ত্তে আনতে পারে না, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। তাঁর কুরসী (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও যমীন পরিবেষ্টন করে আছে এবং তা রক্ষা করা তাঁর জন্য কষ্টকর নয়। তিনিই সর্বোচ্চ, সর্বাপেক্ষা মহান।

আয়াতুল কুরসীর বৈজ্ঞানিক বিস্ময় ও গাণিতিক গঠন

আয়াতুল কুরসীর মধ্যে রয়েছে মোট ৯টি বাক্য। এর গঠন এতটাই বিস্ময়কর যে, প্রথম বাক্যের সঙ্গে নবম, দ্বিতীয়র সঙ্গে অষ্টম, তৃতীয়র সঙ্গে সপ্তম, চতুর্থর সঙ্গে ষষ্ঠ বাক্যের অলৌকিক মিল পাওয়া যায়। মাঝখানে যে পঞ্চম বাক্যটি রয়েছে, সেটি আয়াতটির কেন্দ্রবিন্দু এবং তা আয়াতটির ভাবগত ভারসাম্য তৈরি করে। এমন গাণিতিক ছন্দ ও গঠনশৈলী কুরআনের অলৌকিকত্বের প্রমাণ বহন করে।

আয়াতুল কুরসী পড়ার ফজিলত

  • প্রতিদিনের সুরক্ষা: আয়াতুল কুরসী পড়লে শয়তান দৃষ্টিকোণ থেকে দূরে থাকে।
  • রাতের ঘুমের আগে পড়া: সহিহ বুখারির ২৩১১ নম্বর হাদিস থেকে জানা যায়, ঘুমানোর আগে কেউ আয়াতুল কুরসী পড়লে আল্লাহ একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন, যিনি তাকে রক্ষা করেন।
  • ফরজ নামাজের পর: প্রতিটি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী পড়লে জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যুই একমাত্র বাধা হয়। (নাসাঈ)
  • কোরআনের সবচেয়ে সম্মানিত আয়াত: আয়াতুল কুরসী কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত।

আধুনিক বিজ্ঞান ও আয়াতুল কুরসী

বিজ্ঞান আমাদের শিখিয়েছে যে সময়, মহাকাশ ও পদার্থের নিয়ন্ত্রণ একটি সুপার-ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম ছাড়া সম্ভব নয়। আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহর সীমাহীন জ্ঞান, সময় ও স্থান জয়ের ক্ষমতা, এবং সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের বিবরণ পাওয়া যায় যা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীদের জন্য বিস্ময়কর এক বার্তা বহন করে। যেমন:

  • “লা তা’খুযুহু সিনাতুন ওয়ালা নাওম” – আল্লাহর ঘুম বা তন্দ্রা আসে না: পদার্থের ধারক হিসেবে স্থায়ী শক্তির কথা বিজ্ঞান বললেও, কুরআন তা বহু আগে জানিয়েছে।
  • “ইয়া’লামু মা বাইন আঈদীহিম ওয়ামা খালফাহুম” – সামনে-পেছনে যা কিছু ঘটছে তা তিনি জানেন: এটি ভবিষ্যদ্বাণী এবং অতীতের পূর্ণ জ্ঞানের কথা বলে।

আয়াতুল কুরসী মুখস্থ রাখার উপকারিতা

এই আয়াতটি ছোট হলেও একে মুখস্থ রাখলে আপনি সার্বক্ষণিক আত্মিক শক্তি ও সুরক্ষা অনুভব করবেন। অনেক আলেম বলেন, এটি প্রতিদিন ৩ বার (সকাল, সন্ধ্যা, ঘুমের আগে) পড়া একজন মুসলিমের আত্মিক ঢাল তৈরি করে।

উপসংহার

আয়াতুল কুরসী কেবল একটি আয়াত নয়, বরং এটি একটি জীবনব্যাপী সুরক্ষা, আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাসের উৎস। যারা এই আয়াতটি নিয়মিত পাঠ করেন, তারা জান্নাতের পথে একটি নিশ্চিত সেতু নির্মাণ করে চলেছেন।

সূরা আল বাকারাহ, আয়াত- ২৫৫

আরো ইসলামিক তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *