ইসলামের সূচনা: আদম (আ) থেকে নবী মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত ইসলামের ধারাবাহিকতা
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, হযরত মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসুল। এটাই মুসলমানদের প্রধান পরিচয়। তবে ইসলামের সূচনা কখন এবং কিভাবে হয়—এ ব্যাপারে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ইসলামের শুরু হয়েছে নবী মুহাম্মদ (সা:) এর মাধ্যমে। কিন্তু পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে দেখা যায়, ইসলামের ভিত্তি আদম (আ) থেকে শুরু।
ইসলাম শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও বান্দার জন্য ইবাদত’। ইসলাম কেবল নবী মুহাম্মদ (সা:) এর যুগে শুরু হয়নি, বরং আদম (আ) থেকে নবী মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত সকল নবী-রাসুল একই ধর্ম তথা ইসলামের প্রতিনিধি ছিলেন।
কালেমা তাহিদ ও ইসলামের মূল ভিত্তি
মুসলমানদের মুখস্থ কালেমা তাহিদ হলঃ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”। অর্থ, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। এই কালেমার দুটি অংশ রয়েছে—
- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ — আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই।
- মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ — মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।
দেখা যাচ্ছে, কালেমার প্রথম অংশটি আদম (আ) থেকে শুরু করে সকল নবী বিশ্বাস করতেন। আদম (আ) মহান আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি ও মানবজাতির পিতা। মহান আল্লাহ কুরআন শরীফে আদম (আ) এর সৃষ্টির কথা বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন (সূরা আল-বাকারাহ: ৩০-৩৯)।
আদম (আ) ও ইসলামের সূচনা
আদম (আ) কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তার সম্মানে সকল ফেরেশতাকে আদম (আ) এর কাছে সিজদা করতে আদেশ দেন। ইবলিস এই আদেশ অমান্য করে এবং বিদ্রোহের কারণে নির্বাসিত হন (সূরা আল-বাকারাহ: ৩৪)।
এরপর আদম (আ) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আ) কে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। এখান থেকেই মানবজাতির জীবন শুরু। আল্লাহর নির্দেশনায় আদম (আ) তাঁর সন্তানদেরকে আল্লাহর একত্ববাদ তথা তাওহীদ শিক্ষা দেন। অর্থাৎ, আদম (আ) নিজেও প্রথম মুসলিম ছিলেন এবং ইসলামের পথ প্রদর্শক।

পবিত্র কোরআনে নবী-রাসুলগণের ধারাবাহিকতা
পবিত্র কোরআন শরীফে ২৫ জন নবী-রাসুলের নাম উল্লেখ রয়েছে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আদম (আ), নূহ (আ), ইদ্রিস (আ), হুদ (আ), সালিহ (আ), ইবরাহিম (আ), ইসমাইল (আ), ইসহাক (আ), লুত (আ), ইয়াকুব (আ), ইউসুফ (আ), শুয়াইব (আ), মুসা (আ), হারুন (আ), ইলিয়াস (আ), ইয়াসা (আ), দাউদ (আ), সুলাইমান (আ), আইয়ুব (আ), ইউনুস (আ), জুলকিফল (আ), জাকারিয়া (আ), ইয়াহইয়া (আ), ঈসা (আ) এবং নবী মুহাম্মদ (সা:)।
সূরা বাকারা ২৮৫ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “সেদিন সে (আল্লাহ) তাদের কাছে পাঠানো সব রাসূলকে গ্রহণ করলেন এবং (তাদের প্রতি) বিশ্বাস স্থাপন করলেন।” এটি প্রমাণ করে নবী মুহাম্মদ (সা:) পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের ধর্ম ও বাণীকে গ্রহণ করেছেন।
নবী মুহাম্মদ (সা:) এবং ইসলামের পূর্ণতা
নবী মুহাম্মদ (সা:) ইসলামের ধারাকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন। আগের সমস্ত নবী-রাসুলগণের মেসেজকে তিনি সমাপ্ত করেছেন এবং কোরআন মজিদকে চিরস্থায়ী দিশা হিসেবে প্রদান করেছেন। ইসলামের মূল বিশ্বাস হলো এক আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর রাসুলদের প্রতি আনুগত্য। নবী মুহাম্মদ (সা:) এর মাধ্যমে এই বিশ্বাস চূড়ান্ত রূপ পায়।
তাঁর পবিত্র হাদিস ও জীবনী ইসলামের সব ফিকাহ, আদব, এবং জীবন ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছে। তাই তিনি শুধুমাত্র ইসলামের নবী নন, বরং মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ পিপাসু ও পথপ্রদর্শক।
ইসলামের ধারাবাহিকতা: আদম (আ) থেকে নবী মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত
সকল নবী-রাসুল একই এক ঈশ্বরের পক্ষে আল্লাহর বান্দা ও দূত হিসেবে কাজ করেছেন। তারা মানুষের মাঝে আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা, পাপ থেকে বাঁচানো, ন্যায় বিচার প্রচার এবং কল্যাণের আহ্বান জানিয়ে গেছেন। এটি ইসলামের ধারাবাহিকতা।
প্রত্যেক নবী আল্লাহর ওহী গ্রহণ করে জনসমাজে ন্যায় ও ধর্মের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারা কখনও নতুন ধর্ম আনেননি, বরং আল্লাহর ইবাদত ও একত্ববাদ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
সুতরাং, ইসলামের সূচনা আদম (আ) থেকে শুরু হয়ে নবী মুহাম্মদ (সা:) এর মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে এবং আজও তা অব্যাহত রয়েছে।
উপসংহার
ইসলাম কোনো নবী বা ব্যক্তির আবিষ্কার নয়; এটি আল্লাহর কাছে প্রেরিত চিরন্তন বাণী। আদম (আ) থেকে নবী মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত নবী-রাসুলগণ একই পথ অনুসরণ করেছেন — আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা এবং মানুষকে সঠিক পথে চলার আহ্বান।
আসুন আমরা এই ধারাবাহিকতাকে বুঝি, বিশ্বাস করি এবং জীবনে অনুসরণ করি। মহান আল্লাহ আমাদের সবার জন্য ইসলামের সত্যিকার অনুসারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
অধিকতর ইসলামিক বিষয় জানতে আমাদের ইসলামিক লেবেল পরিদর্শন করুন।
বিশ্বস্ত ইসলামিক রেফারেন্সের জন্য নীচের ওয়েবসাইটগুলো দেখতে পারেন: