আফগানিস্তানের সরকার পদ্ধতি: ইতিহাস ও বর্তমান - info store bd

Latest

info store bd

All Jobs here.

Search This Blog

Saturday, June 14, 2025

আফগানিস্তানের সরকার পদ্ধতি: ইতিহাস ও বর্তমান

আফগানিস্তানের সরকার পদ্ধতি: ইতিহাস ও বর্তমান

আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়ার একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ, ইতিহাসজুড়ে বিভিন্ন ধরনের সরকার পদ্ধতির সাক্ষী হয়েছে। কখনো রাজতন্ত্র, কখনো সামরিক শাসন, আবার কখনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়েছে দেশটি। কিন্তু বর্তমানে আফগানিস্তান তালেবান শাসনের অধীনে, যা একটি ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিভিত্তিক সরকারব্যবস্থা। এই ব্লগে আমরা আফগানিস্তানের সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তনশীল ধারা বিশ্লেষণ করবো।

আফগানিস্তান সরকার

১. রাজতন্ত্র (Monarchy)

আফগানিস্তানের রাজতন্ত্রের সূচনা হয় ১৮০০-এর দশকে। আহমদ শাহ দুর্রানি ছিলেন দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা। ১৯৩৩ সালে জহির শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার শাসনামলে দেশ কিছুটা স্থিতিশীল ছিল এবং আধুনিকায়নের প্রচেষ্টাও দেখা গিয়েছিল।

🔹 পতনের কারণ:

  • রাজনৈতিক সংস্কার না করা
  • গণমানুষের দাবি উপেক্ষা
  • ভ্রাতুষ্পুত্র দাউদ খানের সামরিক অভ্যুত্থান

২. প্রজাতান্ত্রিক ও সামরিক শাসন (Republic & Military Rule)

১৯৭৩ সালে মুহাম্মদ দাউদ খান রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। কিন্তু এই প্রজাতন্ত্র ছিল মূলত সামরিকতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে গঠিত। ১৯৭৮ সালে সাওর বিপ্লবের মাধ্যমে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং সোভিয়েতপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

🔹 মূল বৈশিষ্ট্য:

  • সাম্যবাদী আদর্শে প্রভাবিত
  • মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের প্রয়োগ
  • রুশ সেনা হস্তক্ষেপ (১৯৭৯-১৯৮৯)

এই সময় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন, গৃহযুদ্ধ ও জনদুর্ভোগ শুরু হয়। এর ফলেই আফগান জনগণের মধ্যে প্রতিরোধ গড়ে উঠে, যার মধ্যে তালেবানও ছিল।

৩. ইসলামিক আমিরাত - তালেবান শাসন (১৯৯৬-২০০১)

সোভিয়েত বাহিনী প্রত্যাহারের পর শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ১৯৯৬ সালে তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে এবং ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান নামে সরকার গঠন করে।

🔹 এই শাসনের বৈশিষ্ট্য:

  • শরিয়াভিত্তিক আইন চালু
  • নারী কর্মসংস্থান ও শিক্ষা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা
  • শাস্তির জন্য প্রকাশ্যে ফাঁসি ও দণ্ড কার্যকর

তবে এটি স্পষ্টভাবে বলা জরুরি যে, ইসলাম কখনোই নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ করেনি। বরং ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই শিক্ষা ফরজ করেছে। যেমন, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেনঃ

“তালাবুল ইলমি ফারিদাতুন ‘আলা কুল্লি মুসলিম।”
(জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ)। — ইবনু মাজাহ: ২২৪

৪. গণতান্ত্রিক সরকার (২০০৪-২০২১)

২০০১ সালে মার্কিন বাহিনী তালেবান সরকারকে উৎখাত করে। এরপর ২০০৪ সালে আফগানিস্তানে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হয়। হামিদ কারজাই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরে আশরাফ গনি ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ দ্বৈত নেতৃত্বে ক্ষমতা ভাগ করে শাসন চালান।

🔹 বৈশিষ্ট্য:

  • সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন
  • নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের স্বীকৃতি
  • মার্কিন সহায়তায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠন

৫. তালেবানের পুনরুত্থান (২০২১-বর্তমান)

২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান পুনরায় ক্ষমতা দখল করে। বর্তমানে দেশটি আবারও ইসলামিক আমিরাত নামে পরিচিত হলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।

🔹 বর্তমান সরকারের বৈশিষ্ট্য:

  • নির্বাচনহীন একনায়ক শাসন
  • শরিয়াহ আইনের প্রয়োগ
  • নারীদের উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, তালেবান সরকার প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের পড়াশোনা অনুমোদন দিলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এখনো নিষিদ্ধ রেখেছে। তবে এটি ইসলামের নির্দেশ নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা ইসলামপন্থীদের মধ্যেও বিতর্কিত।

৬. ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

আফগানিস্তানের জনগণ এখন এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে। তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কতটা পরিবর্তিত হবে তা সময়ই বলবে।

🔗 সম্পর্কিত লিংক

📌 উপসংহার

আফগানিস্তানের সরকার ব্যবস্থা শুধুই একটি দেশের ক্ষমতার রূপ পরিবর্তনের ইতিহাস নয়, বরং এটি গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইসলাম সর্বদা শিক্ষা, ন্যায়বিচার ও মানবিকতার পক্ষে — একথা ভুলে গেলে চলবে না।

No comments:

Post a Comment