২০২৫-২৬ সালের জাতীয় বাজেট: দেশের অর্থনীতি ও জনগণের প্রত্যাশা
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাতীয় বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। প্রতিবছর সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালা ও উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল কাঠামো নির্ধারণ করে বাজেট, যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক গতিবিধি এবং জনগণের জীবনমানের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় সরকারের লক্ষ্য দেশের টেকসই উন্নয়ন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এই ব্লগে আমরা ২০২৫-২৬ সালের জাতীয় বাজেটের মূল দিকগুলো বিশ্লেষণ করব, বাজেটের অর্থায়ন, কর ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা, উন্নয়ন খাত এবং চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাজেটের আকার ও অর্থায়ন
২০২৫-২৬ সালের জাতীয় বাজেটের মোট আয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭.৯২ ট্রিলিয়ন টাকা। এর মধ্যে কর আহরণ থেকে আনুমানিক ৫.৬ ট্রিলিয়ন টাকা আসার প্রত্যাশা রয়েছে, যা দেশের রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিফলন। বাজেটের মোট খরচের মধ্যে উন্নয়ন খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের প্রায় ৩৫ শতাংশের বেশি, যা দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বরাদ্দের ফলে দেশের গ্রামীণ ও শহুরে উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
কর ব্যবস্থা ও করমুক্ত আয়সীমা
বাংলাদেশ সরকারের কর ব্যবস্থা গত কয়েক বছরে অনেক উন্নত হয়েছে। ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৩.৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিশেষ সুবিধা হিসেবে কাজ করবে। কর ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, সহজ ও কার্যকর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে করদাতাদের উপর অতিরিক্ত বোঝা পড়বে না এবং রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে করপদ্ধতি সহজতর হওয়ায় করদাতারা আরও উৎসাহিত হবেন।
কর ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা বিষয়ে আমাদের পূর্বের পোস্ট থেকে।
সামাজিক নিরাপত্তা ও ভর্তুকি
দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করতে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। খাদ্য ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করে মোট ৯,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেটের প্রায় ৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বিভিন্ন ভাতা, পেনশন ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও আবাসন খাতেও উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা দেশের সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের জন্য অনন্য অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা নীতিমালা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
উন্নয়ন খাতের অগ্রগতি
বাজেটের উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ৩৫ শতাংশের বেশি। সামাজিক অবকাঠামোতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫.৯২%, শারীরিক অবকাঠামোতে ২১.১২% এবং সাধারণ সেবায় ১৪.২৪%। কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকদের সচ্ছলতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়ও বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আরও জানতে পারেন বাংলাদেশের উন্নয়ন খাত সংক্রান্ত পোস্ট।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার লক্ষ্যে বাজেটে বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায় বিনিয়োগে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্প ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বাজেটের বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া যুব ও নারীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সরকার নানা প্রশিক্ষণ ও উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বাজেটের এই ধারাবাহিকতা দেশের অর্থনীতিকে সুসংগঠিত ও স্থিতিশীল রাখবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্লেষণের জন্য এই লেখাটি পড়তে পারেন।
চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা
যদিও বাজেট ইতিবাচক হলেও এর সফল বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, কার্যকর পরিকল্পনা ও জনগণের সর্বস্তরের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। বাজেটের সুফল সবার কাছে পৌঁছানো এবং সরকারি বিভাগগুলোকে বাজেটের অর্থ সঠিক কাজে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হবে। বিশ্ব বাজারের অস্থিরতা, জ্বালানি সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা করাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। তবে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও উন্নত করা সম্ভব।
উপসংহার
২০২৫-২৬ সালের জাতীয় বাজেট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। কর ব্যবস্থা সহজীকরণ, সামাজিক নিরাপত্তার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে। ইনশাআল্লাহ্, এই বাজেট দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি এই বাজেট দেশের টেকসই উন্নয়ন ও সামগ্রিক শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
আপনি যদি আরও বিস্তারিত আলোচনা চান বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে ব্লগ চান, অনুগ্রহ করে জানাবেন।
No comments:
Post a Comment